ভালোবাসার মতো সস্তা জিনিস হয়তো আর একটিও পৃথিবীতে নেই - সুশান্ত পাল
ভালোবাসার মতো সস্তা জিনিস হয়তো আর একটিও পৃথিবীতে নেই, তাই না... বলো..?
এখন থেকে আমি তোমাকে ভালোবাসা কমিয়ে দেবো। তোমার প্রতি বিশ্বাস বলো, ভরসা কিংবা ভালোবাসার মানুষ হিসেবে, সবচেয়ে কাছের বন্ধু হিসেবে যে আস্থাটুকু জমিয়েছিলাম, তোমার প্রতি যে পরম শ্রদ্ধায়, কৃতজ্ঞতায় মাথা নুয়ে আসত, সেই সবকিছুই এখন থেকে ইচ্ছে করে, আমার চেষ্টা করা কমিয়ে আনব।
এর কারণ কী জানো? পৃথিবীর সব মানুষের কাছ থেকে ঠকে, হেরে, সব হারিয়ে এলেও মানুষ বাঁচতে পারে; নিজের প্রতি, তার ভালোবাসার মানুষদের আস্থার, শ্রদ্ধার, বিশ্বাসের জায়গাটা ধরে রাখতে পারে; কিন্তু যদি কখনো কারও খুব ভালোবাসার, আস্থার, ভরসার মানুষগুলো আঘাত দেয়, বিশ্বাসঘাতকতা করে, তখন আর বেঁচে যদি থাকার কোনও রাস্তা খুঁজে পাওয়া যায় না। তখন পুরো পৃথিবীটাকেই বিশ্বাসঘাতক বলে মনে হয়। তখন মনে হয়, আমি কার কাছে, কিংবা কোথায় গেলে একটা ভরসার মানুষ খুঁজে পাবো? কাকে দেখে নিজের ভাঙাচোরা বিশ্বাসটাকে আবারও জোড়া লাগিয়ে বাঁচার একটা উপায় খুঁজে পাবো?
এই মুহূর্তে আমার ভরসার, আমার বিশ্বাসের, আমার আস্থার শেষ সম্বল বলতে পারো এক তুমিই, কিন্তু আমি চাই না তোমার উপরে এই ভাঙাচোরা বিশ্বাসটুকু জোড়া লাগাবার ভার চাপিয়ে দিয়ে আবারও বেঁচে থাকার শেষ আস্থাটুকুও হারিয়ে ফেলি যদি।
এখন থেকে আমি বরং তোমাকে একটুখানি অবিশ্বাস করতে শুরু করব;কারণ চাইলে তুমিও আমার সাথে মিথ্যের আশ্রয় নিতে পারো, আমার এই বোকা ভালোবাসাকে দুর্বলতা ভেবে আমাকে প্রয়োজনে ব্যবহার করে ছুড়ে ফেলে দিতে পারো, এই ধারণাটুকু ভেতরে লালন করতে শুরু করব; তাহলে আর যা-ই হোক,তোমার যদি কখনো জীবনে এমন কোনোদিন আসে, যদি কোনোদিন আমি শুনতে কিংবা দেখতে পাই।
আমার মতো এমন ভালোবাসার কাঙাল হাজারো মানুষ তোমার জীবনে আছে এবং তাদের সবাইকেই তুমি একই চোখে একইভাবে দেখেছ এবং রেখেছ, তাহলে সেদিন আর আমি নতুন করে কোনও ধাক্কা খাবো না। তবে সেদিন নিজের প্রতি এই ধিক্কার কখনোই জন্মাবে না যে, আমি যাকে এতদিন আমার একান্ত একজন মানুষ, ছলচাতুরিহীন একজন পরিষ্কার মানুষ হিসেবে জেনেছি, সে আসলে তেমন বিশেষ কিছুই নয়, সে-ও আর পাঁচটা সুবিধাবাদী মানুষের মতো সুযোগে মুখোশটা বদলে নিয়েছিল।
যদি কখনো কোনোদিন সেই দিনটা আসে, সেদিন আমার নতুন করে অবাক হবার আর কিছুই থাকবে না, কষ্ট কিংবা কোনও বড়ো আঘাত আমাকে ভেতর থেকে দুমড়ে-মুচড়ে ফেলবে না আর। এর কারণ, আমি তোমার কাছে থেকেই শিখেছি, মানুষের কাছে কোনও প্রত্যাশা রাখতে নেই, তাতে কষ্ট ছাড়া কিছুই মেলে না। সেই দিনগুলোতে তোমার এই শিক্ষাটা আমার মেনে নিতে ভীষণ ভীষণ কষ্ট হতো, জানো? কারণ মানুষ যখন নিজের মন থেকে কারও জন্য কিছু করে, তখন প্রত্যাশাটা ভেতর থেকে এসেই যায়, তাকে দাবিয়ে না রাখলে সে-ও বিপরীত মানুষটার কাছে অনেক অনেক কিছু আকাঙ্ক্ষা করে বসে থাকে। আমি তোমার কাছে শিখেছি, কী করে প্রত্যাশাহীনভাবে বেঁচে থাকতে হয়। এমনকী ভালোবাসার বিনিময়ে কেবল ভালোবাসাই আমি পাবো, প্রত্যাখ্যান কিংবা প্রতারিত হব না, এটা ভাবা অন্যায়।
বরং দিনশেষে নিজের প্রতি ভালোবাসা, যত্নগুলো আরও বাড়িয়ে দিলে হয়তো নিজে আরও ভালো থাকা সম্ভব। কারও প্রতারণা, করুণা কিংবা অবহেলার পাত্র না হয়ে নিজের একটা জায়গা তৈরি করার জন্য আরও অধিক এফর্ট দিলে হয়তো আমার নিজের সাথে নিজেকে নিয়ে বেঁচে থাকার একটা অবলম্বন তৈরি হয়ে যেতে পারে।
তুমি হয়তো ঠিকই বলেছ, এই পৃথিবীতে নিজের জন্য এক নিজেকে ছাড়া আর কাউকেই অপরিহার্য করে তুলতে নেই,যেটা তুমি শিখিয়েছো।
ভালোবাসা জিনিসটা এখন কেমন জানি বোকা আর দুর্বলদের কাজ হয়ে গেল, তাই না? যারা অন্যদের কোনও হিসেবনিকেশ ছাড়াই ভালোবাসতে পারে, অন্যের প্রতি সমব্যথী কিংবা সহমর্মী হয়, তারাই পৃথিবীর সবচেয়ে বড়ো বোকা। কাউকেই ভালোবাসার চর্চা করা যায় না। তাহলে সেটা ভালোবাসা অনেক কম, আর বোকামো হয় বেশি।
আমি পুরো পৃথিবীর কাছে ঠকে এসে, প্রতারিত হয়ে এসে তোমার কাছে নতুন করে আর আঘাত পেতে চাই না। তার চেয়ে বরং তোমাকেই নাহয় আর পাঁচজনের মতোই ভেবে নেব। তাতে আমার কষ্ট কিছুটা হলেও কমে আসবে।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন